Home
Text size A A A
Color C C C C

ভাসানটেক সরকারি কলেজে সৃষ্টির ইতিহাস

ভাসানটেক সরকারি কলেজে সৃষ্টির ইতিহাস

মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনার সানুগ্রহ অভিপ্রায়ে ভাসানটেক সরকারি কলেজে, ঢাকা  ২০১৪ খ্রিষ্টব্দে প্রতিষ্ঠিত হয়। স্বাধীনতা উত্তর ঢাকা মহানগরীর ক্রমবর্ধিষ্ণু টাউনশীপ এলাকায় বসবাসরত গণমানুষের জন্য মান সম্পন্ন শিক্ষা, সর্বোন্নত নৈতিকতা, শৃঙ্খলা এবং সর্বোন্নত দেশপ্রেম নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর রাষ্ট্রনায়োকোচিত সুদুর প্রসারী চিন্তার ফসল হিসাবে এসব অঞ্চলে সরকারি পর্যায়ে ১১ টি স্কুল ও ৬টি মহাবিদ্যালয় স্থাপনের উদ্যোগ গ্রহণ করা হয়। মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর এই মহতি উদ্যোগ বাস্তবায়নের জন্য মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের অধীনে ঢাকা মহানগরীতে ১১ টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ও ৬টি মহাবিদ্যালয় (সরকারি) স্থাপন শীর্ষক প্রকল্প গৃহীত হয়। এ প্রল্পের পরিচালক জনাব মানিক চন্দ্র দে ( বর্তমানে অতিরিক্ত সচিব, অর্থ মন্ত্রণালয়) উপ পরিচালক জনাব সিরাজুল ইসলাম (বর্তমান প্রকল্প পরিচালক হিসাবে অন্যত্রে কর্মরত) উপ-পরিচালক ড. আমিরুল ইসলাম ও সংশ্লিষ্ট অন্যান্যদের নিষ্ঠা, একাগ্রতা ও অক্লান্ত পরিশ্রমের বিনিময়ে ভূমি অধিগ্রহন, ইমারত নির্মাণ, শিক্ষক ও কর্মচারী পদ সৃজন, শিক্ষা উপকরণ সরবরাহসহ সর্বপ্রকার সহযোগিতায় ভাসানটেক সরকারি কলেজ ঢাকা এবং প্রকল্পের অন্যান্য স্কুল ও কলেজ প্রতিষ্ঠার কাজ সমাপ্তির পথে এগিয়ে চলেছে। প্রকল্প বাস্তবায়নের সার্বিক কার্যক্রম তত্ত্বাবধান করেন, প্রফেসর ফাহিমা খাতুন, মহাপরিচালক (প্রাক্তন) মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর, ঢাকা। ২০১১ সালের ১৮ ডিসেম্বর তারিখে সম্পাদিত দীর্ঘমেয়াদী বন্দোবস্ত দলিলের মাধ্যমে ভাসানটেক পূনর্বাসন প্রকল্পের মধ্যে হতে ২.০০ একর অকৃষি খাস জমি ভাসানটেক সরকারি মহাবিদ্যালয় এবং ভাসানটেক সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নামে বরাদ্দ দেয়া হয়। এ দলিলের দাতা হিসাবে স্বাক্ষর করেন ঢাকার তৎকালীন জেলা প্রশাসক জনাব মাহবুবুল হক এবং গ্রহীতা হিসাবে সচিব, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের  পক্ষে  স্বাক্ষর করেন প্রকল্প পরিচালক জনাব মানিক চন্দ্র দে।
কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরু করার লক্ষে বিসিএস ১৯৮৫/৭ম ব্যাচের অর্থনীতি বিষয়ের সহযোগী অধ্যপক জনাব মো: আব্দুস ছামাদকে অধ্যক্ষ পদে পদায়ন করা হয়। তিনি ২৪ এপ্রিল, ২০১৪  তারিখে কলেজের অধ্যক্ষ পদে যোগদান করেন। অধ্যক্ষ নিয়োগ ও যোগদানের মধ্য দিয়েই কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুর হয় বিধায় মন্ত্রণালয় ও মাউশির উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ অধ্যক্ষের যোগদানের তারিখ ও সালকেই কলেজ প্রতিষ্ঠার তারিখ ও সাল হিসাবে বিবেচনা করেন। কলেজের একাডেমিক কার্যক্রম শুরুর প্রাথমিক কাজ ছিল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড হতে পাঠদানের অনুমতি গ্রহণ, ব্যানবেইজ হতে EIIN: (১৩৬৮৪১) নম্বর গ্রহণ অতঃপর বোর্ড হতে কোড সংগ্রহসহ অন্যান্য মৌলিক কার্যাদি সুষ্ঠভাবে সমাপ্ত করা।


 ২১ মে ২০১৪ তারিখে ২৪ জন শিক্ষকের পদায়ন ও যোগদানের মধ্য দিয়ে কলেজ সৃষ্টির প্রথম ধাপ অতিক্রান্ত হয়। ইতোমধ্যে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে একাদশ শ্রেণিতে শিক্ষার্থী ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। জল, বৃষ্টি, কাঁদা ও যাতায়েতের ব্যবস্থা না থাকায় ভাসানটেক পূনর্বাসন প্রকল্পের মসজিদে শিক্ষক পরিষদের প্রথম সভার কার্যক্রম শুরু হয়। এ সভায় ধন্যবাদ প্রস্তাবে মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, শিক্ষামন্ত্রী, শিক্ষা সচিব, মহাপরিচালক, প্রকল্প পরিচালকসহ কলেজ প্রতিষ্ঠার সহিত সর্বস্তরের কর্মকর্তা-কর্মচারীর প্রতি অভিনন্দন ও শ্রদ্ধা জ্ঞাপন করা হয়। অতঃপর ২০১৪-১৫ শিক্ষাবর্ষে ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির কর্মকৌশল নির্ধারণ করা হয়। প্রণীত কৌশল অনুযায়ী অধ্যক্ষসহ সকল শিক্ষক রৌদ্র বৃষ্টির মধ্যে পায়ে হেঁটে, রিকশায়, ভ্যানে, অটো রিকশায় বিভিন্ন স্কুল, কলেজ, গণজামায়েতের স্থান গুরুত্বপূর্ণ মোড় ও স্থাপনায় ছাত্র-ছাত্রীর ভর্তির লিফলেট, ফেস্টুন, ব্যানার বিতরণ/লাগানোর মতো কষ্টকর কাজগুলো আনন্দের সহিত সম্পন্ন করেন। এসবের পাশাপাশি পত্রিকার মধ্যে বাসা বাড়িতে লিফলেট বিতরণ, মাইকিং এবং স্থানীয় টেলিভিশন চ্যানেলে ভাসানটেক সরকারি কলেজের ভর্তির বিজ্ঞপ্তি প্রচার করা হয়। অবশেষে বিজ্ঞান , মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা শাখায় সর্বোমোট ৩৫৮ জন ছাত্র-ছাত্রী ভর্তির মধ্য দিয়ে মহাকালের পথে ভাসানটেক সরকারি কলেজ এর অগ্রযাত্রা শুরু হয়।


কলেজটির চারতলা পর্যন্ত ভবন নির্মাণের কাজ শেষ হয় ২০১৬ সালে। তারপর ৫ম ও ৬ষ্ঠ তলার কাজ চলমান। কলেজের প্রাচীর নির্মাণের কাজ শুরু হয়েছে। শিক্ষকগণের নিবিড় তত্ত্বাবধানে ২০১৪-২০১৫ শিক্ষাবর্ষে ৭২% শিক্ষার্থী উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়। প্রতিষ্ঠাকালীন অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুস ছামাদ এর বদলির পর পদায়ন পান অধ্যক্ষ প্রফেসর হোসনে আরা শেফালী। ২০১৭ অধ্যক্ষ প্রফেসর হোসনে আরা শেফালী এর সরকারি বদরুন্নেসা মহিলা কলেজ, ঢাকায় বদলীর পর নতুন অধ্যক্ষ হিসাবে যোগদান করেন জাতীয় শিক্ষা ব্যবস্থাপনা একাডেমি (নায়েম), ঢাকা এর প্রশিক্ষণ বিশেষজ্ঞ প্রফেসর মাহমুদা খাতুন। তিনি অত্যন্ত দক্ষ ও অভিজ্ঞ। তিনি যোগদানের পর পাঠদান, শিক্ষার্থীদের উপস্থিতি নিশ্চিতকরণের জন্য প্রতি শিক্ষকের অধীনে ১৫ জন করে শিক্ষার্থী ভাগ করে দেন। প্রতি শিক্ষক, তাঁর অধীনের ১৫ জন শিক্ষার্থীর ছুটি, তাদের বাসায় প্রতিদিনের পড়া-লোখার খোঁজ-খবর এবং শিক্ষার্থী ক্লাসে উপস্থিত না থাকলে তাদের বাড়িতে গিয়ে অভিভাবক এবং শিক্ষার্থীকে বোঝানো ইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালনা করেন। এর ফলে প্রতিদিনের শ্রেণিতে উপস্থিতি অভূতপূর্বভাবে সাড়া পড়ে এবং নিবিড় পর্যবেক্ষণের ফলে শিক্ষার্থীদের পরীক্ষায় অংশগ্রহণের হার অনেক বেড়েছে এবং অভিভাবকমহল অনেক খুশি। প্রতিদিন ভিজিলেন্স টিমের নেতৃত্বে এবং অধ্যক্ষ মহোদয়ের উপস্থিতিতে এ্যাসেমব্লিতে জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। প্রতিমাসে শিক্ষক সমন্বয় সভা ও একাডেমিক কাউন্সিল সভা অনুষ্ঠিত হয়। অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদা খাতুন ভাসানটেক সরকারি কলেজে যোগদান করেই ১ম ও ২য় বর্ষের ছাত্র-ছাত্রীদের দাবির প্রেক্ষিতে বার্ষিক শিক্ষা সফরের আয়োজন করেন। অধ্যক্ষ প্রফেসর আব্দুস ছামাদ কলেজের সামনের দিকে পরিসর বাড়ানোর জন্য ভাসানটেক পুনর্বাসন প্রকল্পের অধীনে পতিত অকৃষি জমির মধ্যে হতে আরও এক একর জমি নাম মাত্র মূল্যে অধিগ্রহণের কাজ শুরু করেন। এর পর প্রফেসর হোসনে আরা শেফালী এই ভূমি অধিগ্রহণের কাজ ত্বরান্বিত করেন এবং এই ভূমি অধিগ্রহণের জন্য বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট এর প্রেসিডেন্ট এস. এম. আবুল কালাম আজাদ, বিদ্যুৎ জ্বালানী ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণলয়ের অতিরিক্ত সচিব জনাব আহসানুল জব্বার অনেক পরিশ্রম করেছেন। বর্তমান অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদা খাতুন উক্ত জমি অধিগ্রহণের জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে যাচ্ছেন।  অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদা খাতুন এর প্রচেষ্টায় ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষে (বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা)  ৪৫০ এর স্থলে ১০০০ এ উন্নীত হয়েছে যা কলেজটির একাডেমিক কার্যক্রমের কলেবর অনেক বাড়াবে। অধ্যক্ষ প্রফেসর মাহমুদা খাতুনের সুযোগ্য নেতৃত্বে ভাসানটেক সরকারি কলেজের শিক্ষার্থীদের মাঝে সর্বোন্নত শিক্ষা,  সর্বোন্নত নৈতিকতা সর্বোন্নত শৃঙ্খলা এবং সর্বোন্নত দেশপ্রেম জাগ্রত হবে এবং তাঁরা প্রকৃত মানব সম্পদে পরিণত হবে বলে আমাদের প্রত্যাশা।